Home » » কিভাবে হজ্ব করবেন

কিভাবে হজ্ব করবেন






                                                  
  
                              কিভাবে হজ্ব করবেন



হজ্ব ইসলামের অন্যতম ফরজ বিধান। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য যা অবশ্যই পালনীয় কর্তব্য। এতে শৈথিল্য বা কার্পণ্য করার কোনো অবকাশ নেই। পবিত্র হজ্ব খাঁটি সহিহ শুদ্ধভাবে পালনের ক্ষেত্রে শরিয়তের অতীব প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল অর্থাত্, বিধিবিধান রয়েছে যা হয়তো হজ্ব পালনকারীদের জন্য কিছুটা সহায়ক হতে পারে। পবিত্র হজ্ব ফরজ হওয়ার প্রাথমিক শর্ত হিসেবে জ্ঞানসম্পন্ন বালেগ, সুস্থ সবল ও স্বাধীন হওয়া বাঞ্ছনীয় এবং পবিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের যাবতীয় সাংসারিক খরচের পরিমাণ এমন হতে হবে যে হজ্ব পালন শেষে বাড়ি গমন পর্যন্ত পরিবারবর্গ স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে। এর সাথে যাতায়াত, নিরাপদ থাকা, হজ্বে প্রয়োজনীয় সম্বল থাকা এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে মোহরেম লোক সাথে থাকার নিশ্চয়তা।

সাধারণত বাংলাদেশের মানুষ তামাত্তু হজ্ব করে থাকেন। তামাত্তু হজ্বে সর্বপ্রথম কাজ উমরাহর জন্য ইহরাম যা ফরজ। গোসল অথবা ওযু সেরে মীক্বাত অতিক্রম করার আগেই সেলাইবিহীন একটি চাদর পরুন, অপর একটি চাদর গায়ে জড়িয়ে নিন। এরপর অবস্থানুযায়ী দু’রাক’আত নামাজ পড়ুন। এবার ইহরামের নিয়ত করুন এবং আওয়াজ করে অন্তত একবার (তিনবার হলে ভালো) তালবিয়া পাঠ করুন।

হজ্বের প্রস্তুতি: ৮ যিলহজ্ব থেকে হজ্বের অনুষ্ঠান শুরুর জন্য অপেক্ষা করবেন। সাথে সাথে ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত থেকে সুষ্ঠু ও নির্ভুল হজ্ব সম্পাদন করার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করতে থাকবেন। হজ্বের দিনগুলোতে আপনার করণীয়:হজ্বের মূল দিবসগুলো হচ্ছে ৮ যিলহজ্ব থেকে ১৩ যিলহজ্ব পর্যন্ত। হজ্বের ইহরাম (ফরজ) :৮ যিলহজ্ব তারিখে হজ্বের নিয়ত করে ইহরাম বেঁধে সূর্যোদয়ের পর মিনা অভিমুখে রওয়ানা হবেন। তালবিয়াহ পাঠ করতে করতে। মিনায় অবস্থান (সুন্নত) : ৮ যিলহজ্ব যোহরের আগে মিনায় পৌঁছে যোহরের নামাজ পড়বেন। অত:পর আসর, মাগরিব ও এশা এবং ৯ যিলহজ্ব ফরজ নামাজ আদায় করবেন। মিনাতে অবস্থানকালে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর কাছে রহমত কামনা করবেন। উকুফে আরাফা (ফরজ) : ৯ যিলহজ্ব মিনা থেকে ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্যোদয়ের পর তালবিয়া পাঠ করতে করতে আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের জন্য রওয়ানা হবেন। রাসূল ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হচ্ছে হজ্ব। আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান অবশ্যই করবেন। যোহর ও আসরের নামাজ- জোহরের প্রথম ওয়াক্তে এক আজান ও দু’ইকামাতে কসর করে একত্রে পড়তে হয়। সেখানে অবস্থানের সময় বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে অবস্থান সঠিক হয়। কারণ, আরাফাত সংলগ্ন ‘আরানা উপত্যকা’ অবস্থিত। সেখানে ‘মসজিদে নামিরা’ অবস্থিত। হাজীদের ভুল করে ওই উপত্যকায় অবস্থান করতে দেখা যায়। যা হোক সূর্যাস্তের পর মুজদালেফায় রাতযাপনের জন্য রওয়ানা হবেন। মুজদালেফায় অবস্থান :সূর্যাস্তের পর আরাফা বা রাস্তায় কোথাও মাগরিবের নামাজ না পড়ে সোজা মুযদালেফার উদ্দেশ্যে চলতে থাকুন। মুয়দালেফায় পৌঁছে এক আজানে ও দু’ইকামতে দু’ওয়াক্ত নামাজ কসর আদায় করবেন (কসর মাগরিবের হবে না, শুধু এশার হবে) মুযদালেফায় অবস্থানকালে জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপের জন্য মুদ্রাকারের ৪৯ বা ৭০টি কঙ্কর সংগ্রহ করবেন। ফজরের নামাজ আদায় করে প্রত্যুষে আকাশ ফর্সা হতে থাকলে মিনার দিকে রওয়ানা হবেন। কঙ্কর নিক্ষেপ (ওয়াজিব) : ১০ যিলহজ্ব বড় জামারাতে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ার পূর্ব পর্যন্ত। কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব এবং নিক্ষেপের সময় ‘তাকবির’ বলবেন। নিক্ষেপ করার সময় স্তম্ভের গায়ে নয়, বৃত্তের মধ্যে পড়লে হবে। সতর্কতার সাথে করবেন কারণ ওই সময় প্রচন্ড ভিড়ের কারণে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। কুরবানি করা (ওয়াজিব) : ১০ যিলহজ্ব কঙ্কর নিক্ষেপ শেষে কুরবানি করবেন। অত:পর মাথা মুণ্ডন করে অথবা চুল ছেঁটে গোসল সেরে ইহরামের কাপড় খুলে স্বাভাবিক কাপড় পরবেন। খেয়াল রাখতে হবে যেন কঙ্কর মারা, চুল ছাঁটা বা মাথা মুন্ডন করা এবং কুরবানি করার মধ্যে ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়। তা না হলে দম বা কাফফারা দিয়ে হজ্ব শুদ্ধ করে নিতে হবে।

তাওয়াফে জিয়ারত (ফরজ): ১০ যিলহজ্ব কঙ্কর মারা শেষে তাওয়াকে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে মিনা থেকে ‘খানায়ে কাবা’ যেতে হবে। ওই দিন সূর্যাস্তের আগেই তাওয়াফে জিয়ারতের কাজ সারতে হবে। তা না হলে ১২ জিলহজ্ব তারিখের পরে তাওয়াফ করে দম দিতে হবে। অবশ্য মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কারণে না করতে পারলে পবিত্র হওয়ার পর তা সমাধা করবেন। কঙ্কর নিক্ষেপ (ওয়াজিব): ১১ যিলহজ্ব দুুপুরের পর (সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়লে) প্রথমে ছোট জামারায়, তারপর মধ্যম জামারায় এবং বড় জামারায় সাতটি করে মোট ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। ১২ যিলহজ্ব আগের দিনের মতোই করবেন। জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য একই বিধান। তবে মহিলাদের রাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করা জায়েয। নিজ হাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। বিনা ওজরে অন্য কারো মাধ্যমে কঙ্কর নিক্ষেপ করা জায়েয নয়। কুরবানি: ক্বিরান হজ্জ ও তামাত্তু হজ্ব পালনকারীদের ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব। হজ্বকারী আল্লাহর সন্তুষ্টি ও কুরবানির উদ্দেশ্যে উট, দুম্বা, ভেড়া ও ছাগল যেকোনো একটি বা একাধিক জবাই করে যে রক্ত প্রবাহ করেন তাকে কুরবানি বলে। অবশ্য সৌদি কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে অনুমোদিত ব্যাংকের বুথ স্থাপন করেছে। সেখানে টাকা জমা দিয়ে কুপন সংগ্রহ করলেই কুরবানির ব্যবস্থা হয়ে যায়। সর্বশেষে বিদায়ী তাওয়াফ করে মক্কা শরিফ থেকে বিদায় নেবেন। যারা মদিনাতে যাননি, তারা মসজিদে নববী জিয়ারাতের উদ্দেশ্যে মদিনা যাবেন। মিনা ত্যাগ: মিনায় থাকতে না চাইলে ১২ যিলহজ্জ্ব সন্ধ্যার আগে বা পরে মিনা ত্যাগ করুন। সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করা ভালো।

বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব): মক্কা শরিফ থেকে বিদায়ের আগে বিদায়ী তাওয়াফ করুন। এতে ইজতেবা, রমল, সায়ি নেই। মাকামে ইবরাহিমে দু’রাক’আত নামাজ পড়ে মুলতাজাম, কা’বার দরজা ও হাতিমে দোয়া করুন। জমজমের পানি পান করেও দোয়া করুন। তাওয়াফে জিয়ারতের পর কোনো নফল তাওয়াক করে থাকলেও বিদায়ী তাওয়াফের ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। মহিলারা শারীরিক কারণে বিদায়ী তাওয়াফ করতে না পারলে কোনো অসুবিধা নেই, এ জন্য কোনো দম বা কাফফারা নেই। তালবিয়া শেষে কয়েকবার দুরূদ শরীফ পাঠ করে দোয়া করুন। তালবিয়ার বাংলা অর্থ: আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাজির। সকল প্রশংসা ও নেয়ামত তোমার জন্যেই এবং রাজত্বও তোমার, তোমার কোন শরীক নেই।” হজ্বের সময় এটি হাজীদের সঙ্গীত এবং হজ্ব ও ওমরার স্পষ্ট স্মারক।

মহিলাদের ইহ্রামে ব্যতিক্রম কিছু নিয়মাবলি:১. মহিলাদের ইহ্রামের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক নেই। মহিলারা সেলাইযুক্ত ঐ সমস্ত কাপড় পরিধান করবেন, যেগুলো তাঁরা স্বাভাবিকভাবে ব্যবহার করে থাকেন। যেমন- শাড়ি, সালোয়ার, কামিজ, ম্যাক্সি, বোরখা ইত্যাদি। (উজ্জ্বল রং এর নয়)। তবে শাড়ি পরে তাওয়াফ ও সায়ী করা অনেক অসুবিধা ও কষ্টকর। আরামদায়ক জুতাও ব্যবহার করতে পারবেন। ইহ্রাম বাঁধার পূর্বে গোসল করে নিন। অসুবিধা থাকলে শুধু ওযু করে নিন। খুব ভালভাবে চিরুনি দিয়ে চুল আঁঁচড়িয়ে নিন। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য হজ্বের নিয়ত এবং ইহ্রামের অন্যান্য নিয়ম একই রকম। কিন্তু মহিলারা তালবিয়া মনে মনে পড়বেন। ২. ইহ্রাম অবস্থায় মহিলারা মুখমণ্ডল খোলা রাখবেন। ইহ্রাম অবস্থায় ওযু করার সময় মাথার রুমাল সরিয়ে চুলের উপরেই মাথা মাসেহ করতে হবে। ইহ্রাম অবস্থায় অলংকার এবং হাত মুজা পরিধান করা জায়েয, তবে না করাই ভাল। মহিলাদের জন্য মাথা মুণ্ডন করা নিষেধ। তাওয়াফের সময় মহিলারা কখনও ইযেতবা এবং রমল করবেন না এবং সায়ী করার সময় সবুজ বাতি দুটির মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়াবেন না। গলায় ফুলের হার ব্যবহার মাকরূহ। ৩. ইহ্রাম বাঁধার সময় যদি কোন মহিলার হায়েয বা শরীর খারাপ অবস্থায় থাকে, তবে এ অবস্থায়ই ইহ্রাম বেঁধে নেবেন, ইহ্রামের নিয়তে ওযু-গোসল করে কেবলামুখী হয়ে বসে নিয়ত করবেন এবং তালবিয়া পাঠ করবেন, নামায পড়বেন না, তালবিয়া ও যিকির-আযকারে মনোনিবেশ করবেন, মক্কা শরীফে পৌঁছে মসজিদে হারামে প্রবেশ করবেন না। ১১. পুরো একদিন ও একরাত মাথা বা মুখমন্ডল আবৃত করে রাখলে ‘দম’ আর এর কম হলে সদকা দিতে হবে।

ইহ্রাম বাঁধার নিয়ম (পুরুষ ও মহিলা) : ১. ইহ্রাম বাঁধার পূর্বে নখ, গোঁফ, চুল (গুপ্তস্থানসহ) কেটে পরিচ্ছন্ন হয়ে গোসল করে আতর সুগন্ধি মেখে তৈরি হয়ে ইহ্রামের কাপড় পরিধান করুন। ২. ইহ্রাম বাঁধার সময়ে গোসল করা সুন্নাত। মহিলাদের অসুবিধা থাকলে ওযু করলেও চলবে। গোসলের পর ভালভাবে চুল আঁচড়িয়ে নেয়া দরকার। ৩. পুরুষরা সেলাই করা কাপড় খুলে একটা সাদা চাদর নাভির উপর থেকে লুঙ্গির মত পরে নিন। তার উপর পকেটওয়ালা একটি বেল্ট বেঁধে তার মধ্যে টাকা পয়সা রাখবেন। পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত সতর ঢেকে রাখা ফরয। আর একখানা চাদর গায়ে জড়িয়ে নিন। যেন দু’কাঁধ ও পিঠ ঢাকা থাকে। ইহ্রামের পোশাক কাফনের ন্যায় সাদা ও নতুন হওয়া উত্তম। ৪. প্রস্তুতি হিসেবে ইহ্রাম বাঁধার আগে দু’ রাক‘আত নফল নামায পড়ুন। ১ম রাক‘আতে সূরা সূরা ফাতেহা কাফিরুন এবং ২য় রাক‘আতে সূরা ইখলাস পড়া উত্তম। তবে মাকরূহ ওয়াক্তে যদি ইহরামের নিয়ত করতে হয় তখন এই নফল নামায পড়া ঠিক হবে না। এখনও আপনি ইহ্রামের নিয়ত করেননি, সেহেতু ইহ্রামের নিয়তের পূর্বে প্রস্তুতি হিসেবে ঐ দু’রাক‘আত নফল নামায পড়ার সময় মাথায় টুপি দিয়ে (পুরুষের জন্য) পড়বে। এখন ইহ্রামের নিয়ত করবেন। এজন্য সালাম ফিরিয়ে মাথার টুপি খুলে ফেলুন। দু’কাঁধ, পিঠ উপরের সাদা চাদরটি দিয়ে ঢেকে রাখুন। উমরাহ এবং অন্য তিন প্রকার হজ্বের যে কোন একটির জন্য পূর্ব প্রস্তুতি ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মনে মনে নিয়ত করুন। নিয়ত হচ্ছে: হে আল্লাহ! আমি উমরাহ্ পালনের নিয়াত করলাম, একে আমার জন্য সহজ করে দাও। আমার পক্ষ থেকে কবুল কর। নিয়ত অতি জরুরি। কারণ নিয়ত গুণে বরকত ও রহমত। মনে মনে নিয়তের পর পরই, উচ্চৈঃস্বরে আওয়াজ করে তিনবার তালবিয়া পাঠ করুন। এ তালবিয়া মেয়েলোকরা মনে মনে পড়বেন। ইহ্রামের জন্য তালবিয়া ও নিয়ত উভয় জরুরি। তালবিয়াটি হচ্ছে লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান নি-মাতা, লাকা ওয়ালমুল্ক, লা শারীকা লাক”।


[লেখক :খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, ঢাকা]

1 comments:


  1. ১০০% সত্য মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা অনলাইনে ইনকাম করতে চাইলে ভিজিট করুন
    Online Income Tips
    www.oitips2.blogspot.com

    ReplyDelete

Like us on Facebook
Follow us on Twitter
Recommend us on Google Plus
Subscribe me on RSS