Home » » অর্ধশত প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার শিকার লাখ লাখ মানুষ

অর্ধশত প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার শিকার লাখ লাখ মানুষ




সর্বশেষ
অর্ধশত প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার শিকার লাখ লাখ মানুষক্লিক জ্বরে না ভুগে মেধার সদ্ব্যবহার করার তাগিদ হায়দার আলী
রাসেল, আনোয়ার ও শফিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। থাকেন মিরপুরের পাইকপাড়ার একটি বাড়িতে। কয়েক মাস আগে জানতে পারেন, পেইড টু ক্লিক (পিটিসি) অর্থাৎ অনলাইনে ক্লিক করেই প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের ডলার উপার্জন করা যায়! সাতপাঁচ না ভেবে জনপ্রতি সাত হাজার টাকা করে দিয়ে সদস্য হন স্কাইল্যান্সার ডট কম নামের একটি 'আউটসোর্সিং' প্রতিষ্ঠানের। গত জানুয়ারিতে সদস্য হলেও এ পর্যন্ত কোনো মাসেই টাকা বা ডলার কিছুই পাননি তাঁরা।
শফিক, আনোয়ার আর রাসেলই শুধু নন, এ রকম লক্ষাধিক লোক প্রতারিত হয়েছেন স্কাইল্যান্সারের ফাঁদে পড়ে। মানুষকে সহজে অর্থ উপার্জনের স্বপ্ন দেখিয়ে অর্ধশত কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন। প্রতারিতদের মধ্যে বেশির ভাগই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এ রকম তরুণদের 'ক্লিক জ্বরে না ভুগে' মেধার সদ্ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন অউটসোর্সিং বিশেষজ্ঞরা।
আউটসোর্সিংয়ে দক্ষতা উন্নয়নবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ডেভসটিমের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা এবং সফল ফ্রিল্যান্সার ইউনুস হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তরুণদের বলব, পিটিসি বা এ ধরনের প্রতারণামূলক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে প্রকৃত ফ্রিল্যান্সিং অথবা অনলাইন ব্যবসা শিখতে। ক্লিক করেই টাকা ইনকাম করা যায়- এমন ধারনা পাল্টাতে হবে। কর্মমুখী কিছু শিখুন যা ভবিষ্যতে অনেক অনেক কাজে আসবে। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে শেখা সম্ভব না হলে, অনলাইনেই অনেক রিসোর্স রয়েছে- যেখান থেকে সাহায্য পাওয়া যেতে পারে। ওয়েব ডিজাইন-ডেভেলপিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, অ্যাফিলিয়েশন মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এবং ব্লগিংয়ের মতো বিষয়গুলোতেই বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলো শিখে নিজের ব্যবসা যেমন দাঁড় করানো সম্ভব, তেমনি কেউ চাইলে এগুলোর ওপর ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতেও প্রচুর কাজ রয়েছে।'
এদিকে সেন্টার ফর টেকনোলজি ডেভেলপমেন্টের (সিটিডি) প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা জাবেদ মোর্শেদ বলেন, 'পেইড টু ক্লিক যে প্রতারণা, সেটি অনেক আগে থেকেই আমরা বলে আসছি। প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এখনই এসব প্রতারক কম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।'
স্কাইল্যান্সারের অফিসে হামলা : স্কাইল্যান্সারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোনো অর্থ না পেয়ে সম্প্রতি কলাবাগান লেক সার্কাস এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির অফিসে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায় প্রতারিত গ্রাহকরা। সেই সঙ্গে স্কাইল্যান্সারের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান নীলকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
স্পিক এশিয়া নামের সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশ থেকে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে।
প্রতারণায় অর্ধশত প্রতিষ্ঠান : একই রকম প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে সারা দেশে প্রায় অর্ধশত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এভাবে প্রতারণা চললেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এমনকি নেই কোনো প্রশাসনিক নজরদারিও।
স্কাইল্যান্সারের প্রতারণার শিকার আনোয়ার বলেন, 'স্কাইল্যান্সারের সদস্য হলে ক্লিকের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকার বেশি উপার্জন করা যাবে, সেই ভেবে স্কাইল্যান্সারের সদস্য হলাম। এখন ওরা আমাদের টাকা-পয়সা হাতিয়ে পালিয়েছে। একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। টাকা ফেরত পাওয়ার কোনো উপায় দেখছি না।'
প্রতারণার শিকার রাসেল বলেন, 'আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় চিন্তা করেছিলাম নিজের আয়ে লেখাপড়ার খরচ জোগাব। গ্রামের বাড়ি থেকে একটি বাছুর বিক্রি করে দুটি আইডি কিনেছিলাম। কিন্তু এখন তো উপার্জন করা দূরের কথা, আসল টাকাই গচ্চা গেল।'
একইভাবে রাজধানীর জিগাতলার অ্যাডসোর্সিং নামের এক প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী জামিল সারোয়ার, রিফাতুল হায়াত ও আরফানুল হক। প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা উপার্জন করা যাবে চিন্তা করে সদস্য হয়েছিলেন তাঁরা ওই প্রতিষ্ঠানের। তাঁরা জানান, ছয় মাসে প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ২০ কোটি টাকার মতো নিয়ে অফিস তালা মেরে পালিয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটির লোকজন। জামিল সারোয়ার বলেন, আ্যাডসোর্সিংয়ের মালিক জনি আহামেদ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে কিছুদিন আত্মগোপনে থেকে এখন শ্যামলীতে অন্য নামে প্রতারণা চালাচ্ছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বর্তমানে দেশে এ ধরনের ডিজিটাল প্রতারণায় নেতৃত্বে দিচ্ছে ডুল্যান্সার, ব্রাভো আইটি, ল্যান্সটেক, অনলাইন অ্যাড ক্লিক, পেইড টু ক্লিক, সেফটি ক্লিক, স্কাইল্যান্সার, পিটিসি ফর বিডি, অ্যাড সোর্সিং, ক্লিক টু পেইডসহ অন্তত ৩০টি প্রতিষ্ঠান। নিজেদের সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যবসা করছে তারা। এরা নিজেদের আউটসোর্সিংয়ের ফ্রিল্যান্স প্রতিষ্ঠান বলে নিজেদের দাবি করছে।
ক্লিক জ্বরে শিক্ষার্থীরা : অনলাইনে উপার্জনের পরিচিত দুটি শব্দ ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং। ঘরে বসেই প্রতিদিন হাজার টাকা উপার্জন করা যায়। কিন্তু এক শ্রেণীর প্রতারক আউটসোসিং আর ফ্রিল্যান্সিংয়ের নামে চালিয়ে যাচ্ছে বড় ধরনের প্রতারণা। ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে প্রতিদিন হাজার টাকা উপার্জনের লোভ দেখিয়ে সদস্য ফি বাবদ হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। প্রতারিতদের ৮০ শতাংশই বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
উত্তর শ্যামলীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আজমল ফরাজী বলেন, 'ক্লিকের মাধ্যমে উপার্জনের কথা বলে ওরা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেধা ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমার ছেলেটি এইচএসসিতে ভালো রেজাল্ট করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হলেও এখন ক্লিক জ্বরে ভুগছে। প্রতিদিন নাকি ক্লিকের মাধ্যমে ডলার উপার্জন করবে ডোল্যান্সার নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে। কিন্তু ছয় মাসে এক হাজার টাকাও উঠাতে পারেনি। এখন টাকা তো পাচ্ছেই না বরং লেখাপড়ায়ও মনোযোগ দিচ্ছে না সে।'
শিশু হাসপাতালের চাকরিজীবী বাবুল হোসেন অভিযোগ করেন, এসব প্রতিষ্ঠান মেধাবী শিক্ষার্থীদের ধ্বংসের জন্য মাঠে নেমেছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'লাখ লাখ শিক্ষার্থী ভুয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে অর্থ হারানোর পাশাপাশি মেধার অপচয় করছে কিন্তু সরকারের বা প্রশাসনের কোনো ভূমিকা চোখে পড়ছে না। আর দেরি নয়, ক্লিকের প্রতারণা এখনই বন্ধ করা সরকারের উচিত।'
পিটিসি আসলে আউটসোর্সিং নয় : সফল ফ্রিল্যান্সার ইউনুস হোসেন বলেন, 'নতুনরা যখন শুনছে যে ইন্টারনেটে টাকা আয় করা যায়, তখন কিছু লোক পিটিসি (পেইড টু ক্লিক) কম্পানির নামে প্রতারণায় নেমে পড়েছে। পিটিসি আসলে কোনোভাবেই আউটসোর্সিং নয়, এটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ের (এমএলএম) মাধ্যমে এক ধরনের প্রতারণামূলক ব্যবসা। এখানে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ওই টাকার একটি অংশই তাদের দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে একটি প্রতারক কম্পানি বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে পালিয়েছে, পথে বসেছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী।'

1 comments:


  1. ১০০% সত্য মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা অনলাইনে ইনকাম করতে চাইলে ভিজিট করুন
    Online Income Tips
    www.oitips2.blogspot.com

    ReplyDelete

Like us on Facebook
Follow us on Twitter
Recommend us on Google Plus
Subscribe me on RSS